অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে এক মাদরাসাছাত্র হত্যার জট খুলে দিলো একটি চাবি। এ ঘটনায় নিহত ছাত্রের তিন সহপাঠীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার কথা স্বীকারও করেছে। পরে শনিবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ১৬ নভেম্বর বিকেলে বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুর হাফিজিয়া এতিমখানা মাদরাসার পাশে জলাশয় থেকে পুলিশ আকরাম খান (৯) নামে এক ছাত্রের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর থেকেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেবের নেতৃত্বে একদল পুলিশ রহস্য উদঘাটনে নামে। একপর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে আকরাম খানের কাছে একটি চাবি ছিল। সে চাবি দিয়ে এতিমখানার অনেক ছাত্রের ট্রাঙ্কের তালা খোলা যায়। তাই মাদরাসার কারও কিছু চুরি হলেই সবাই তাকে সন্দেহ করতো।
বিষয়টি আমলে নিয়ে এ তথ্যের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে পুলিশ। পরে এ হত্যায় জড়িত সন্দেহে নিহতের তিন সহপাঠীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার কথা স্বীকার করে।
তারা পুলিশকে জানায়, আকরাম হত্যার কিছুদিন আগে এক ছাত্রের ট্রাঙ্ক থেকে দুই দফায় ১১০ টাকা চুরি হয়। ওই টাকা খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে আটক তিনজন জানতে পারে আকরাম খানের কাছে একটি তালা খোলার চাবি আছে; যা দিয়ে অধিকাংশ ছাত্রের ট্রাঙ্কের তালা খোলা যায়। তাদের সন্দেহ হয় আকরাম খান তার টাকা চুরি করেছে। এতে তাদের মনে আকরাম খানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। আকরামকে সুযোগ পেলে শিক্ষা দেবে বলে পরিকল্পনা করে অভিযুক্তরা।
গত ১৬ নভেম্বর প্রতিদিনের মতো আকরাম খানসহ অন্যান্য শিশুরা ফজরের আজানের আগে ঘুম থেকে উঠে কোরআন পাঠ করে পড়াশুনা শেষে নাস্তা খেয়ে সকাল ১০টায় এতিমখানার বোর্ডিংয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এদিকে অভিযুক্তরা প্রতিদিন ভোরে ফজরের নামাজের আগে মাদরাসায় আসে এবং রাতে এশার নামাজের পর নিজেদের বাড়িতে চলে যায়। মাদরাসার রুটিন অনুযায়ী সকাল ১০টায় মসজিদের ভেতর সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও তারা ঘুমানোর ভান করে আকরামকে শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ খোঁজতে থাকে।
বেলা ১১টার দিকে আকরাম ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যায়। তখন ওই তিনজন সুযোগ বুঝে সেখানে যায়। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আকরামের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে মাদরাসা সংলগ্ন জলাশয়ের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আকরামকে টাকা চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে তিনজন মিলে তাকে মাটিতে ফেলে দুই হাত এবং দুই পা বেঁধে ইট দিয়ে আঘাত করে। এতেও আকরামের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়ায় তাকে জলাশয়ের পানিতে চুবিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এরপর মরদেহ ফেলে চুপিসারে মসজিদে এসে ঘুমানোর ভান করে শুয়ে থাকে। পরবর্তীকালে আকরামকে খুঁজে পাওয়া না গেলে তারা তাকে খুঁজে বের করার অজুহাতে নৌকা সেচ করার জন্য ঘটনাস্থলে যায় এবং তার হাত-পা বাঁধা মরদেহ পাওয়া গেছে বলে স্থানীয়দের খবর দেয়।
এদিকে, সন্তানের মৃত্যুর খরব পেয়ে গত ১৭ নভেম্বর সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন মা ফুলতারা খাতুন। তিনি সন্দেহ পোষণ করেন, মাদরাসার শিক্ষকও তার সন্তান হত্যায় জড়িত রয়েছেন। তিনি শিক্ষককেও জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান।
ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বানিয়াচং থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব বলেন, আটক মাদরাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীকালে তাদের ঢাকায় কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হবে।
Leave a Reply